বাংলা ১মসর্বশেষ

প্রাক-নির্বাচনি পরীক্ষার প্রস্তুতিঃ ক্লাস-০৪

দ্বাদশ শ্রেণি 

বাংলা প্রথমপত্র

নাটক : সিরাজউদ্দৌলা: 

শিখনফলঃ

  • নাটক কাকে বলে জানতে পারবো।
  • বাংলা নাটকের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যাবে
  • চার অঙ্ক বিশিষ্ট এ নাটক সিরাজউদ্দৌলা
  • সিরাজউদ্দৌলা নাটকের মূলভাব দেশপ্রেম তা জানতে পারবো
  • বিশ্বাসঘাতকদের কারণে কত নির্মম পরিণতি তা জানা যাবে
  • ঘসেটি বেগম ও সিরাজউদ্দৌলার দ্বন্দ্ব ক্ষমতার দ্বন্দ্ব যা রাজনৈতিক।
  • স্বার্থপরতা ও বিশ্বাসঘাতকতা নিন্দনীয় তা জানতে পারবো
  • নাটকের ঐতিহাসিকতা, ট্র্যাজেডি, নামকরণের সার্থকতা জানতে পারবো। * ইরেজের কূটকৌশল ও স্বার্থান্বেষী মনোভাবের পরিচয়
  • বাংলার শেষ নবাবের পরাজয় ও করুণ পরিণতি সম্পর্কে ধারণা
  • বাংলার সাধারণ মানুষের উপর ইংরেজদের অত্যাচারের স্বরূপ
  • জাতীয় জাগরণের চেতনাবোধের বিকাশ সম্পর্কে জানতে পারবো

নাট্যকার পরিচিতিঃ

  • নামঃ সিকানদার আবু জাফর(১৯১৮-১৯৭৫)
  • জন্ম: সিকানদার আবু জাফর ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মার্চ সাতক্ষীরা জেলার তালা থানার অন্তর্গত তেঁতুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আদি নিবাস পাকিস্তানের পেশোয়ারে সেখান থেকে তাঁর পিতামহ মাওলানা সৈয়দ আলম শাহ হাশেমী ওই গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেন।
  • পূর্ণ নামঃ  সৈয়াদ আল হাশেমী আবু জাফর মুহম্মদ বখত সিকানদার
  • পিতাঃ  সৈয়দ মঈনুদ্দীন হাশেমী
  • শিক্ষা ও কর্মজীবনঃ
  • সিকানদার আবু জাফর স্থানীয় তালাবিদ ইনস্টিটিউট থেকে প্রবেশিকা ১৯৩৬ এবং কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আই এ পাশ করেন।
  • কলকাতার মিলিটারি একাউন্টস বিভাগে ১৯৩৯ এ তিনি পেশাগত জীবন শুরু করেন পরে সিভিল সাপ্লাই অফিসে চাকরি করেন।
  • সত্যেন্দ্ৰনাথ মজুমদারের ” গ্লোব নিউজ এজেন্সী” নামক সংবাদ সংস্থায়ও কিছুকাল কাজ করেন: এ সময় তিনি ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।
  • ১৯৫০ সালে কলকাতা হতে ঢাকায় আসেন সিকানদার আবু জাফর দৈনিক নবযুগ, ইত্তেফাক, সংবাদ ও মিল্লাত পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন।
  • বিখ্যাত মাসিক পত্রিকা ‘সমকাল’ এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ( ১৯৫৭-১৯৭০) ছিলেন।
  • ১৯৫৮ সালে “সমকাল মুদ্রায়ন’ নামে একটি ছাপা খানা ও ” সমকাল প্রকাশনী” নামে একটি প্রকাশনালয় স্থাপন করেন।
  • ষাটের দশকে পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার যে ধারা গড়ে ওঠে সিকানদার আকু জাফর ছিলেন অন্যতম পৃষ্ঠপোষক।
  • ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীনতা, দেশপ্রেম ও বিপ্লবের চেতনা সম্পন্ন অনেক গান রচনা করেন।
  • ‘আমাদের সংগ্রাম চলবেই’ বিখ্যাত গানটি তাঁর রচিত মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রেরণার উৎস ছিল।
  • মৃত্যুঃ  ৫ আগস্ট ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দ

রচনাসমূহঃ

  • কাব্যঃ প্রসন্ন প্রহর (১৯৬৫), বৈরীবৃষ্টিতে (১৯৬৫), তিমিরান্তক (১৯৬৫), কবিতা ১৩৭২. (১৯৬৮) . বৃশ্চিক, লগ্ন (১৯৭১)
  • নাটকঃ শকুন্ত উপাখ্যান (১৯৫২). মাকড়সা (১৯৬০). সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৫). মহাকবি আলাওল (১৯৬৬)
  • উপন্যাসঃ  মাটি আর অক্ষে (১৯৪২). পুরবী (১৯৪৪), নতুন সকাল(১৯৪৫)
  • গল্পগ্রন্থঃ  মতি আর অশ্রু ১৯৪১
  • কিশোর উপন্যাস: জয়ের পথে ১৯৪২, নবী কাহিনী (জীবনী ১৯৫১)
  • অনুবাদঃ রুবাইয়াৎ ওমর খৈয়াম (১৯৬৬), সেন্ট লুইয়ের সেতু (১৯৬১). বার্নাড মালামুডের যাদুর কলস (১৯৫৯), সিংয়ের নাটক (১৯৭১)
  • গানঃ  মালব কৌশিক (১৯৬৯)
  • পুরস্কার লাভঃ  নাটকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৬), একুশে পদক মরণোত্তর (১৯৮৪)

পাঠ বিশ্লেষণ (সংক্ষেপিত)

‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকটি ইতিহাসাশ্রিত করুণ নাটক, ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন সংঘটিত পলাশি যুদ্ধের আগে ও পরের ঘটনা নিয়ে “সিকানদার আবু জাফর’ রচনা করেন অসাধারণ ঐতিহাসিক এ নাটক। নাটকে এক অনিবার্য ও ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকার মধ্য দিয়ে সিরাজউদ্দৌলাকে নাট্যকার ট্র্যাজেডির নায়কের মতোই অসামান্য ও অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এ নাটকের মাধ্যমে কৃতীধন্য নাটীকার বাঙালিকে এ বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন যে সিরাজউদ্দৌলা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন, ষড়যন্ত্র টের পেয়েও একান্ত মানবিক ঔদার্যে প্লুত মহানুভব মানুষটি আপনজনদের কাছে, আমৃত্যু আস্থাশীল থাকার কারণে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কখনোই কঠোর ও নির্মম হতে পারেননি।

নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন নবাব আলিবর্দি খাঁর দৌহিত্র। ১৭৫২ সালের মে মাসে আলিবর্দি খাঁ সিরাজউদ্দৌলাকে তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করেন। সে সময় ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো বাংলার ভবিষ্যৎ নবাবকে অভিনন্দন জানায়। ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১০ এপ্রিল নবাব আলিবর্দি খাঁর মৃত্যু হলে সিরাজউদ্দৌলা তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নানা বিবিধ কার্যকলাপে তরুণ নবাব সিরাজউদ্দৌলা খুবই অসন্তুষ্ট।

কারণ: 

১) তারা নবাবাবের অনুমতি ব্যাতি রেখে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মাণ করে

২) মুঘল শাসকদের প্রদত্ত বাণিজ্যিক সুবিধার অপব্যবহারে। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে

৩) সরকারি তহবিল তছনছকারী রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণ দাসকে আশ্ৰয় প্রদান করে

ইংরেজরা যদি প্রচলিত অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় এবং মুর্শিদকুলি খান প্রদত্ত বিধি ও শর্তানুসারে বাণিজ্য করতে সম্মত হয় তাহলে নবাব তাদের ক্ষমার ঘোষণা দেন। কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বড় কর্তারা (কর্ণধার) তা আমলে না নিয়ে নবাবের প্রেরিত দূতকে অপমান করে। এত ক্ষুব্ধ হয়ে ইংরেজদের সমুচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য নবাব সিরাজউদ্দৌলা প্রথমে কাশিমবাজার কুঠি অবরোধ করেন এবং পরবর্তীতে কলকাতা অধিকার করে ইংরেজদের বিতাড়িত করেন। ইংরেজ পক্ষের গভর্নর ড্রেক গোপনে পালিয়ে যান। কিন্তু ধূর্ত কর্নেল ক্লাইভমাদ্রাজ থেকে অধিক সংখ্যক সৈন্যসামন্ত নিয়ে এসে কলকাতার দুর্গ পুনর্দখল করেন।

এরপর শুরু হয় মুর্শিদাবাদে নবাবের সাথে দরকষাকষি। ক্লাইভ যেমন ধূর্ত তেমন সাহসীও আকার যেমন মিথ্যাবাদী তেমনি কৌশলী। চারিদিক থেকে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে তিনি তরুণ নবাবকে বিভ্রান্ত ও বিব্রত করার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন। ধূর্ত ক্লাইভ নবাবের অধিকাংশ লোভী, স্বার্থান্ধ, শঠ ও বিশ্বাসঘাতক অমাত্য ও সেনাপতিকে বিপুল পরিমাণে ঘুষ তথা উৎকোচসহ নানা প্রকার প্ররলাভন দেখিয়ে নিজের দলে ভিড়িয়ে নেন।

সিরাজউদ্দৌলা এ ধরণের মারাত্মক ষড়যন্ত্র টের পেয়েও উদারতার কারণে আস্থা ও বিশ্বাস হারাননি এবং ঘনিষ্টজনদের প্রতি কঠোর ও নির্মম হতে পারেননি।

এ সুযোগে এবার ক্লাইভ সরাসরি নবাবের বিরোদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশির প্রান্তরে ক্লাইভের নেতৃত্বে যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধ মূলত শঠতা আর বিশ্বাসঘাতকতার। ইংরেজদের তুলনায় সিরাজউদ্দৌলার সৈন্য, গোলাবারুদ, কামান ছিল বেশি। বিপুল সমর সরঞ্জাম এর সামর্থ্য থাকার পরও নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হলেন।

কারণ: সিরাজউদ্দৌলার অধিকাংশ সেনাপতি যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। নবাবের আস্থাভাজন যে কয়জন সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন তাঁরাও একের পর এক মৃত্যুবরণ করতে থাকেন। নবাব বাধ্য হলেন যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করতে। সিরাজউদ্দৌলার এ পলায়ন জীবন রক্ষার্থে নয় বরঞ্চ পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে স্বাধীনতা বজায় রাখার প্রবল আকাঙ্ক্ষায়। কিন্তু তিনি সফল হননি। পাটনা যাওয়ার পথে তিনি বন্দি হন ভগবানগোলায় এবং মিরজাফরের পুত্র মিরণের নির্দেশে ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২ জুলাই কৃতঘ্ন মোহাম্মদী বেগের হাতে নিহত হন। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজের এ মৃত্যুতে এক করুণ ট্র্যাজেডির ইতিহাস সৃষ্টি হয়।

মুহাম্মদ রুহুল কাদের, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজ, চট্টগ্রাম ইপিজেড।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button