বেসরকারী পাবলিক স্কুল ও কলেজ

প্রাক-নির্বাচনি পরীক্ষার প্রস্তুতিঃ ক্লাস-০৪

দ্বাদশ শ্রেণি 

বাংলা প্রথমপত্র

নাটক : সিরাজউদ্দৌলা: 

শিখনফলঃ

নাট্যকার পরিচিতিঃ

রচনাসমূহঃ

পাঠ বিশ্লেষণ (সংক্ষেপিত)

‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকটি ইতিহাসাশ্রিত করুণ নাটক, ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন সংঘটিত পলাশি যুদ্ধের আগে ও পরের ঘটনা নিয়ে “সিকানদার আবু জাফর’ রচনা করেন অসাধারণ ঐতিহাসিক এ নাটক। নাটকে এক অনিবার্য ও ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকার মধ্য দিয়ে সিরাজউদ্দৌলাকে নাট্যকার ট্র্যাজেডির নায়কের মতোই অসামান্য ও অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এ নাটকের মাধ্যমে কৃতীধন্য নাটীকার বাঙালিকে এ বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন যে সিরাজউদ্দৌলা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন, ষড়যন্ত্র টের পেয়েও একান্ত মানবিক ঔদার্যে প্লুত মহানুভব মানুষটি আপনজনদের কাছে, আমৃত্যু আস্থাশীল থাকার কারণে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কখনোই কঠোর ও নির্মম হতে পারেননি।

নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন নবাব আলিবর্দি খাঁর দৌহিত্র। ১৭৫২ সালের মে মাসে আলিবর্দি খাঁ সিরাজউদ্দৌলাকে তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করেন। সে সময় ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো বাংলার ভবিষ্যৎ নবাবকে অভিনন্দন জানায়। ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১০ এপ্রিল নবাব আলিবর্দি খাঁর মৃত্যু হলে সিরাজউদ্দৌলা তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নানা বিবিধ কার্যকলাপে তরুণ নবাব সিরাজউদ্দৌলা খুবই অসন্তুষ্ট।

কারণ: 

১) তারা নবাবাবের অনুমতি ব্যাতি রেখে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মাণ করে

২) মুঘল শাসকদের প্রদত্ত বাণিজ্যিক সুবিধার অপব্যবহারে। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে

৩) সরকারি তহবিল তছনছকারী রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণ দাসকে আশ্ৰয় প্রদান করে

ইংরেজরা যদি প্রচলিত অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় এবং মুর্শিদকুলি খান প্রদত্ত বিধি ও শর্তানুসারে বাণিজ্য করতে সম্মত হয় তাহলে নবাব তাদের ক্ষমার ঘোষণা দেন। কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বড় কর্তারা (কর্ণধার) তা আমলে না নিয়ে নবাবের প্রেরিত দূতকে অপমান করে। এত ক্ষুব্ধ হয়ে ইংরেজদের সমুচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য নবাব সিরাজউদ্দৌলা প্রথমে কাশিমবাজার কুঠি অবরোধ করেন এবং পরবর্তীতে কলকাতা অধিকার করে ইংরেজদের বিতাড়িত করেন। ইংরেজ পক্ষের গভর্নর ড্রেক গোপনে পালিয়ে যান। কিন্তু ধূর্ত কর্নেল ক্লাইভমাদ্রাজ থেকে অধিক সংখ্যক সৈন্যসামন্ত নিয়ে এসে কলকাতার দুর্গ পুনর্দখল করেন।

এরপর শুরু হয় মুর্শিদাবাদে নবাবের সাথে দরকষাকষি। ক্লাইভ যেমন ধূর্ত তেমন সাহসীও আকার যেমন মিথ্যাবাদী তেমনি কৌশলী। চারিদিক থেকে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে তিনি তরুণ নবাবকে বিভ্রান্ত ও বিব্রত করার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন। ধূর্ত ক্লাইভ নবাবের অধিকাংশ লোভী, স্বার্থান্ধ, শঠ ও বিশ্বাসঘাতক অমাত্য ও সেনাপতিকে বিপুল পরিমাণে ঘুষ তথা উৎকোচসহ নানা প্রকার প্ররলাভন দেখিয়ে নিজের দলে ভিড়িয়ে নেন।

সিরাজউদ্দৌলা এ ধরণের মারাত্মক ষড়যন্ত্র টের পেয়েও উদারতার কারণে আস্থা ও বিশ্বাস হারাননি এবং ঘনিষ্টজনদের প্রতি কঠোর ও নির্মম হতে পারেননি।

এ সুযোগে এবার ক্লাইভ সরাসরি নবাবের বিরোদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশির প্রান্তরে ক্লাইভের নেতৃত্বে যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধ মূলত শঠতা আর বিশ্বাসঘাতকতার। ইংরেজদের তুলনায় সিরাজউদ্দৌলার সৈন্য, গোলাবারুদ, কামান ছিল বেশি। বিপুল সমর সরঞ্জাম এর সামর্থ্য থাকার পরও নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হলেন।

কারণ: সিরাজউদ্দৌলার অধিকাংশ সেনাপতি যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। নবাবের আস্থাভাজন যে কয়জন সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন তাঁরাও একের পর এক মৃত্যুবরণ করতে থাকেন। নবাব বাধ্য হলেন যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করতে। সিরাজউদ্দৌলার এ পলায়ন জীবন রক্ষার্থে নয় বরঞ্চ পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে স্বাধীনতা বজায় রাখার প্রবল আকাঙ্ক্ষায়। কিন্তু তিনি সফল হননি। পাটনা যাওয়ার পথে তিনি বন্দি হন ভগবানগোলায় এবং মিরজাফরের পুত্র মিরণের নির্দেশে ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২ জুলাই কৃতঘ্ন মোহাম্মদী বেগের হাতে নিহত হন। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজের এ মৃত্যুতে এক করুণ ট্র্যাজেডির ইতিহাস সৃষ্টি হয়।

মুহাম্মদ রুহুল কাদের, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজ, চট্টগ্রাম ইপিজেড।
Exit mobile version