ট্রাস্ট ও মিশনারিসহ অন্যান্য সংস্থা পরিচালিত স্কুল-কলেজের পরিচালনা কমিটি গঠনের বিষয়ে স্পষ্টীকরণ প্রজ্ঞাপন দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনোনয়ন আগের মতোই সংস্থা প্রধান দেবেন। পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনের আওতার বাইরে থাকবে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
অর্থাৎ বিভাগীয় কমিশনার-জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা এবং তার মনোনীত প্রার্থী এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সভাপতি হতে পারবেন না। ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখ রবিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে এ প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গভর্নিংবডি-ম্যানেজিং কমিটি গঠন সংক্রান্ত প্রবিধানমালা-২০২৪ এর প্রবিধি ৬৩-তে উল্লিখিত ট্রাস্ট, মিশনারি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, কালেক্টরেট, পুলিশ লাইন, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ, রেলওয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা বোর্ড বা অন্য কোনো সংস্থা বা ফাউন্ডেশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০ আগস্টের ১৮৩ নম্বর প্রজ্ঞাপনের আওতা বহির্ভূত থাকবে।
যা আছে প্রবিধানমালার ৬৩-ধারায়
সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিংবডি বা ম্যানেজিং কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে প্রবিধানমালা ৬৩-তে বলা হয়েছে-১. ট্রাস্ট, মিশনারি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, কালেক্টরেট, পুলিশ লাইন, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ, রেলওয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা বোর্ড বা অন্য কোনো সংস্থা বা ফাউন্ডেশন পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য গভর্নিংবডি বা, ক্ষেত্রমত, ম্যানেজিং কমিটি গঠন করিতে হবে যেভাবে-ক. সভাপতি সংস্থা প্রধান বা তৎকর্তৃক মনোনীত ব্যক্তি। খ. শিক্ষক প্রতিনিধি শিক্ষকদের মধ্য থেকে সংস্থা প্রধানের মনোনীত দুই জন শিক্ষক। গ. অভিভাবক প্রতিনিধি অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্য থেকে সংস্থা প্রধানের মনোনীত তিন জন অভিভাবক, তবে তাদের মধ্যে ন্যূনতম একজন নারী হবেন। ঘ. শিক্ষা বোর্ড থেকে মনোনীত একজন শিক্ষানুরাগী। ঙ. সদস্য-সচিব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান (পদাধিকারবলে)।
এ ছাড়াও বলা হয়েছে, উপ-প্রবিধান (১) এর অধীন গঠিত বোর্ড বা কমিটির মেয়াদ হবে দুই বছর। এখানে উল্লিখিত কর্তৃপক্ষ, সংস্থা বা ফাউন্ডেশন পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষ দিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্র অনুমোদন ও নিবন্ধন থাকতে হবে এবং গভর্নিংবডি বা, ক্ষেত্রমত, ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদনের সময় নিবন্ধন সনদ ও হালনাগাদ গঠনতন্ত্রের কপি সংযুক্ত করতে হবে।
এদিকে ২০ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপনে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিংবডি ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে বিভাগীয় কমিশনার-জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা বা তাদের মনোনীত প্রার্থীকে দায়িত্ব দেয়ার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিংবডি ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে বেসরকারি ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিংবডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা, ২০২৪-এর ৬৮ অনুযায়ী নির্দেশনা দেয়া হলো।
যা আছে প্রবিধানমালার ৬৮-ধারায়
কিছু ক্ষেত্রে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে প্রবিধানমালার ৬৮-ধারায় বলা হয়েছে, ১. এই প্রবিধানমালায় যা কিছুই থাকুক না কেনো সরকার, জাতীয় পর্যায়ে এবং বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের, ক্ষেত্র মতো, গভর্নিংবডি, ম্যানেজিং কমিটি, নির্বাহী কমিটি, অ্যাডহক কমিটি বা বিশেষ পরিস্থিতি কমিটির সভাপতি পদে দায়িত্ব পালনরত ব্যক্তির দায়িত্বের অবসান ঘটিয়ে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক অথবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সভাপতি পদে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ প্রদান করতে পারবে। ২. উপ-প্রবিধান (১) এর অধীন নিযুক্ত সভাপতি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড বা কমিটির বিদ্যমান সদস্যদের সমন্বয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, অথবা অ্যাডহক কমিটির মতো সংক্ষিপ্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা বোর্ড থেকে অনুমোদন গ্রহণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, নতুন কমিটি গঠন করতে চাহিলে শিক্ষা বোর্ড থেকে অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, মন্ত্রণালয়ের আদেশে কমিটি ভেঙে দেয়া হয়নি। শুধু সভাপতি পদে ক্ষেত্র মতো বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও ইউএনও বা তাদের প্রতিনিধিদের কথা বলা হয়েছে। কমিটির অন্যান্য পদের সবাই ঠিক থাকবেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর লাপাত্তা হয়ে যায় এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতিরা। কারণ, বেসরকারি প্রায় সব স্কুল-কলেজ-মাদরাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদ বাগিয়ে বসেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
সভাপতি পলাতক হওয়ায় এমপিওর চেক ছাড় হওয়ার পরেও বেতন তুলতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর। পরে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে নির্দেশনা আসে সভাপতির অনুপস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও জেলা প্রশাসকের (ডিসি) স্বাক্ষরে বেতন তোলা যাবে।