প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ
শুভেচ্ছা জেনো। তোমাদের পরীক্ষাও সমাগত। নিশ্চয়ই ভাল করে পড়ছো।
আজকে আলোচনা করবো “আমার পথ” প্রবন্ধটি। লিখেছেন কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬)।
রচনার উৎসঃ
কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত প্রবন্ধগ্রন্থ “তরুদ্র-মঙ্গল” হতে সংকলিত। প্রবন্ধে তিনি নিজের বিশ্বাস আর সত্যকে প্রকাশের মহিমা সম্পর্কে জানিয়েছেন সুদৃঢ় প্রত্যয় মানসে।
শিখনফলঃ
- সত্য ও মিথ্যার মধৌ পার্থক্য নির্দেশ করতে পারবতে
- সত্যের পথ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে পারবে।
- কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরি হবে। #নির্ভয়ে সত্য প্রকাশের বোধ তৈরি হবে
- তারুণ্যকে নমস্কার জানানোর কারণ ব্যাখ্যা করতে পারবে।
- সত্যটা জেনে নিজেকে সংশোধন করতে পারবেতে
- আত্মকে চেনার মানসিকতা গড়ে উঠবে।কা
- পরাবলম্বন মনোবৃত্তি দূর করতে পদক্ষেপ নিতে পারবে।
- উৎকৃষ্ট মানব সমাজ গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ হবে।
সাহিত্যকর্মঃ
“আমার পথ” প্রবন্ধটির আলোচনা:
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রাতিস্বিকতায় প্রোজ্জ্বল কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি স্বকালবিদ্ধ যুগন্ধর এক কবি। সাহিত্যের কালস্পর্শী প্রবহমান প্রাসঙ্গিকতার বিচারে যুগোত্তীর্ণ কিংবদন্তির নায়ক। নবজাগ্রত মুসলিম বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির চেতনার ঐশ্বর্যে এবং সমাজ ধর্ম দর্শন সাম্য সব বিষয়ে যিনি ছিলেন সোচ্চার কণ্ঠ।
“আমরি পথ” প্রবন্ধটি কবির বিখ্যাত প্রবন্ধগ্রন্থ “রুদ্র-মঙ্গল” হতে সংকলিত। প্রবন্ধকার বললেন তিনি নিজেই নিজের কর্ণধার। কাউকে তিনি তোয়াজ করেন না। কারো কাছে মাথা নত করেন না। নিজের চেনা পথেই চলেন। বিপদ যদি আসে ভয় নেই সাহসই প্রধান শক্তি। খুব বেশি বিনয় দেখাতেও চান না। তিনি বলেছেন প্রবন্ধে— “ওরকম বিনয়ের চেয়ে অহংকারের পৌরুষ অনেক অনেক ভালো।” সুস্পষ্টভাবে তিনি বলতে চান। তাঁর ধারণা, নিজেকে চিনলেই সব চেনা হয়ে যায়।
মহাত্মা গান্ধীর খুব ভক্ত ছিলেন। গান্ধীজি আমাদের নিজস্বতা উপলব্ধির বিষয়টাকে শিক্ষা দিচ্ছিলেন। অথচ আমরা তাঁকে বুঝতে পারিনি। তাঁকে ত্যাগ করেছি। আমরা আবার পরাবকলম্বন শুরু করলাম। ফলে কী হলো, আর্মার আমরা গ্লোম হয়ে গেলাম। আত্মনির্ভর না হলে আমরা কখনো স্বাধীন হতে পারব না। কাজী নজরুল ইসলামের মতে “নিজে নিষ্ক্রিয় থেকে অনী একজন মহাপুরুষকে প্রাণপণে ভক্তি করলেই যদি দেশ উদ্ধার হয়ে যেত, তাহলে এই দেশ এত দিন পরাধীন থাকতো না ।
প্রবন্ধকার সত্য প্রকাশ করতে চান। তাঁর ধারণা, এই ঘুণেধরা সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি হলো সত্য। প্রলয় আনার যে দুর্গম সাহসিকতা তা লেখকের আছে। একমাতব্বরোত্র মিথ্যার জলই প্রাবন্ধিকের শিখাকে নেভাতে পারে। তা ছাড়া প্রাকন্ধিককে কেউ নেভাতে পারবে না বলে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস। তিনি বলেন আমরা দ্বন্দ্ব বিভেদ ভুলে একসঙ্গে একত্রে মিলেমিশে কাজ করতে পারব। তিনি আরো সুস্পষ্ট করে বলেন– যার নিজের ধর্মে বিশ্বাস আছে, যে নিজের ধর্মকে চিনেছে সে কখনো অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না। মূলত প্রবন্ধকার যে কথার প্রতি জোর দিয়েছেন তা হলো: সত্য প্রকাশ এবং মিথ্যাকে ঘৃণার পাশাপাশি তাঁর অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক চেতনার বহিপ্রকাশ ঘটেছে আলোচ্য প্রবন্ধে।
সৃজনশীল নমুনা প্রশ্নঃ
রিজওয়ানুল সাহেব একজন সাদা মনের মানুষ। শিক্ষকতা পেশায় থেকে গড়েছন আলোকিত মানুষ। নিজের চিন্তা চেতনায় ও তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলেছেন সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান ” পালাবদল’ জনকল্যাণের পাশাপাশি তিনি এলাকার মাতব্বরদের ভণ্ডামির প্রতিবাদ করেন। মিথ্যা ও নতজানুর বিরুদ্ধে তিনি সদা সোচ্চার। ফলে অনেকেরই শত্রুতে পরিণত হন।তবে তিনি দমে যান না, তিনি বিশ্বাস করেন, সত্য ও ন্যায়ের পথই সহজ পথ। “
ক) কাদের পক্ষে কেবল অসাধ্য সাধন করা সম্ভব?
খ) কী মানুষকে ক্রমেই ছোট করে ফেলে? কেন?
গ) উদ্দীপকের রিজওয়ানুল সাহেব এর বিশ্বাসের সঙ্গে “আসার পথ” প্রবন্ধের কোন দিকটির সাদৃশ্য
রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ) ‘আমার পথ” প্রবন্ধের যে দিকটি উদ্দীপকে প্রতিফলিত নয়, তা আলোচনা তা আলোচনা কর।
বিঃদ্রঃ ক ও খ উত্তর সরাসরি উত্তর নমুনা এবং গ ও ঘ সাংকেতিক উত্তর নমুনা।
সৃজনশীল নমুনা উত্তরঃ
ক) যাদের তথাকথিত নিজের সত্যকে বড় মনে করার দম্ভ আছে, কেবল তাদের পক্ষেই অসাধ্য সাধন করা সম্ভব।
খ) খুব বেশি বিনয় দেখাতে গিয়ে নিজের সত্যকে অস্বীকার করার প্রবণতা মানুষকে ক্রমেই ছোট করে। আমরা অনুধাবন করতে পারি খুব বেশি বিনয় দেখাতে গেলে অসত্যকে, অন্যায়কে মেনে নিতে হয়। সুস্পষ্টভাবে নিজের বিশ্বাস আর সত্যকে প্রকাশ করতে না পেরে মিথ্যা বিনয় দেখালে পরনির্ভরতার জন্ম নেয়। এতে নিজের ব্যক্তিত্ব আহত হয়। এই প্রবণতা ক্রমেই মানুষকে অন্যের কাছে ছোট করে।
গ) উদ্দীপকে রিজওয়ানুল সাহেব এর সঙ্গে ” আমার পথ” প্রবন্ধের সত্য ও ন্যায়কে অবলম্বন করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দিকটিতে সাদৃশ্য রয়েছে।
‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বলেন “ভুলকে ঠিক বলে চালিয়ে দেওয়াটালে কপটতা বা ভণ্ডামি। এই ভুল ব্যক্তির, সমাজের বা বিশ্বাসের হতে পারে। ভুল থেকে বেরিয়ে আসাই প্রাবন্ধিকের একান্ত প্রত্যাশা। সৃষ্টি হবে মনুষ্যত্ববোধ।
মথ্যা ও নতজানুর বিরোদ্ধে মানবধর্ম সত্যকে উন্মোচিত করে উদ্দীপকের রিজওয়ানুল সাহেব একজন সাদানের মানুষ। তিনি অন্যায়কে কখনো প্রশ্রয় দজেকে চিনেননি। মিথ্যা ও নতজানুতার বিরুদ্ধে তিনি সবসময় সোচ্চার। অন্যায়ের বিরোধিতার কারণে অনেকে তার শত্রুতা করেছে। কিন্তু তিনি দমে জাননি। উদ্দীপক ও আমার পথ প্রবন্ধে সত্য ও ন্যায়ের পথে চলার দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ) “আমার পথ” প্রবন্ধের আমিত্ববোধের বিষয়টি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি। আর প্রতিটি মানুষ পূর্ণ এক ‘আমি’ র সীমায় ব্যাপ্ত হলে এই আমির পথ ধরেই আসবে সত্য। নিজেকে চিনলে, নিজের সত্যকে নিজের কর্ণধার মনে করলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এবং তা মানুষকে সব দাসত্ব বা গোলামি হতে মুক্ত রাখে।
উদ্দীপকে বর্ণিত রিজওয়ানুল সাহেব একজন সাদা মনের মানুষ। তিনি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে মানুষকে আলোকিত করেন। সমাজ আলোকিত হয়। মিথ্যা ও নতজানুর বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার। এ জন্যে তাঁর অনেক শত্রু আছে বটে, কিন্তু তিনি দমে যাননি। তিনি সত্য ও ন্যায়ের পথে চলেন এবং সমাজের ভণ্ডামির প্রতিবাদ করেন। তিনি সমাজের মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।
মূলত “আমার পথ” প্রবন্ধে আমিত্ববোধ বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়েছে যৌক্তিকনিষ্ঠতায়। প্রতিটি মানুষের মাঝে আমিত্ব জাগাতে হবে আর আমিত্ববোধের সত্যকে ধারণ করে সব বাধা ভাঙতে হবে। উদ্দীপকের রিজওয়ানুল সাহেব এর মধ্যে আমিত্ববোধ বিকাশের দিকটি অনুপস্থিত। রিজওয়ানুল সাহেব এখানে সমাজসেবী ও নির্ভীক ব্যক্তি হিসেবে উঠে এসেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি, ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের আমিত্ববোধ উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি।
মুহাম্মদ রুহুল কাদের, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজ, চট্টগ্রাম ইপিজেড।