আবশ্যিক বিষয়পড়ালেখাবাংলা ১মসর্বশেষ

অপরিচিতা -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অপরিচিতা -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অসামান্য প্রতিভার অধিকারী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) আধুনিক বাংলা কবিতার প্রাণপুরুষ। তার সাহিত্যসাধনার একটি বৃহৎকাল বাংলা সাহিত্যের ‘রবীন্দ্রযুগ’ নামে পরিচিত। মানবধর্মের জয় ও সৌন্দর্য-তৃষ্ণা রোমান্টিক এ কবির কবিতার মূল সুর। কবিতা ছাড়াও তিনি ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি ও সংগীত রচনায় কালজয়ী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি ছিলেন অনন্য চিত্রশিল্পী, অনুসন্ধিৎসু বিশ্বপরিব্রাজক, দক্ষ সম্পাদক এবং অসামান্য শিক্ষা-সংগঠক ও চিন্তক। নিজে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণে নিরুৎসাহী হলেও ‘বিশ্বভারতী’ নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনি স্বাপ্নিক ও প্রতিষ্ঠাতা। মাত্র পনেরো বছর বয়সে তার প্রথম কাব্য ‘বনফুল’ প্রকাশিত হয়। বাংলা ছোটগল্পের তিনি পথিকৃৎ ও শ্রেষ্ঠ শিল্পী। ‘গীতাঞ্জলি’ এবং অন্যান্য কাব্যের কবিতার সমন্বয়ে স্ব-অনূদিত ‘Song Offerings’ গ্রন্থের জন্য ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম এশীয় হিসাবে তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। ‘অপরিচিতা’ গল্পে লেখক যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রতিরোধের পথ তুলে ধরেছেন। যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক গল্প লিখেছেন। তার লেখা বিভিন্ন গল্পে যৌতুকের নির্মমতা নানাভাবে প্রকাশ পেয়েছে। ‘দেনাপাওনা’ গল্পে নিরুকে দেখতে পাই যৌতুকের বলি হতে। তবে তা অন্য ভাবে। ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমের মতো একজন শিক্ষিত অথচ ব্যক্তিত্বহীন পুরুষের কাপুরুষোচিত আচরণ, লোভী মামার অশোভনীয় আচরণ এ গল্পে উনিশ ও বিশ শতকের বাঙালি সমাজকেই প্রতিফলিত করেছে। গল্পের আখ্যানে শম্ভুনাথ সেন ও মেয়ে কল্যাণীর বিয়ে প্রত্যাখ্যান বিশ শতকে নারীর নব জাগরণের ইঙ্গিত বহন করে। গল্পের শেষাংশে কল্যাণীর দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা, রেল কর্মকর্তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যেন ভবিষ্যতের নতুন নারীর আগমনের বার্তা দেয়। তৎকালিন সামাজিক প্রেক্ষাপট, সংকীর্ণমনা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার নির্মম বাস্তবতার বর্ণনা গল্পকে অনেক বেশি পরিচিত করে তুলেছে। গল্পের শেষে অনুপমের মানসিক পরিবর্তন পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সামাজিকভাবে মূল্যহীন হয়ে পড়া এবং পরিবর্তনে বাধ্য হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে। যিনি নিজের দুর্বলতার কথা স্বীকার করে অপরাধের মাত্রা কিছুটা হলেও কমিয়েছেন।

‘অপরিচিতা’ গল্প পড়ার সময় যে দিকগুলো ভালোকরে খেয়াল করতে হবে

‘অপরিচিতা’ গল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নতুন একটি যুগের আগমন বার্তা ঘোষণা করেছেন। যে বার্তায় বাবা সম্ভুনাথ সেন যেমন স্বরূপ পেয়েছে, তেমনি স্বরূপ পেয়েছে কল্যাণীর মতো আধুনিক চেতনাসম্পন্ন নারী। পশ্চাতপদ সমাজ ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আধুনিক চিন্তা ও মনন সমৃদ্ধ একটি দেশ গড়ার ক্ষেত্রে প্রগতিশীল সমাজভাবনাই যেন এখানে প্রধান হয়ে উঠেছে। যৌতুকের নেতিবাচক রূপের সঙ্গে অনুপমের মতো পৌরুষহীন মানুষের কাছ থেকে সমাজ যে কোনো কিছুই প্রত্যাশা করে না এবং সমাজের রীতি নির্ধারণে এদের যে কোনো ভূমিকা নেই তা গল্পকার বুঝিয়ে দিয়েছেন। এ গল্পের যে দিকগুলো ভালো করে পড়তে হবে তা নিচে তুলে ধরা হলো। গল্পে আলোচিত সমাজ ব্যবস্থা কেমন ছিল? অনুপমের বলা গল্পটি কয়টি অংশে বর্ণনা করা হয়েছে। গল্পের কোন কোন অংশ বর্তমান আর কোন কোন অংশ অতীতের কথার স্মৃতিচারণ। অনুপমের মামার আচরণ ও তার দৃষ্টিভঙ্গি। অনুপমের অসহায়, অকর্মণ্য, পৌরুষহীন অবস্থার বর্ণনা। শম্ভুনাথ সেনের সাহসী, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। কল্যাণীর বন্ধুবৎসল আচরণ, চঞ্চলতা, প্রতিবাদী সত্তার জাগরণ ও দেশমাতৃকার জন্য নিজেকে সঁপে দেওয়ার কঠিন প্রতিজ্ঞা। বিয়ে করাকে কেন্দ্র করে অনুপমের মানসিক পরিবর্তন।

অনুধাবন প্রশ্ন

১. ‘এ জীবনটা না দৈর্ঘ্যরে হিসেবে বড়, না গুণের হিসেবে’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

২. ‘ছোটকে যাহারা সামান্য বলিয়া ভুল করেন না তাহারা ইহার রস বুঝিবেন’- ব্যাখ্যা কর।

৯. সাময়িক সাহিত্যে লেখকদের পক্ষে অবনতিকর কেন?

১০. বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টা করিবেন না- বলতে কী বোঝানো হয়েছে? / কেন বলা হয়েছে?

১১. অলংকার ব্যবহারে লেখকের সতর্কতার কারণ ব্যাখ্যা কর।

১২. সরলতাকে শ্রেষ্ঠ অলংকার বলা হয়েছে কেন?

১৩. কাহারও অনুকরণ করিও না- কেন বলা হয়েছে?/ অনুকরণের দোষগুলো ব্যাখ্যা কর।

১৪. লেখার বিষয়বস্তুর প্রমাণ হাতে থাকা প্রয়োজন কেন?

১৫. বাঙলা সাহিত্যের উন্নতি কীভাবে দ্রুত হবে?

১৬. উদ্দেশ্যপ্রণোদিত লেখা নীচ ব্যবসায়ীর সঙ্গে তুলনীয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

১৭. প্রাবন্ধিকের মতে, শ্রেষ্ঠ লেখক কে এবং কীভাবে? বুঝিয়ে লেখ।

১৮. লেখার উদ্দেশ্য পাঠককে বুঝানো- কথাটি ব্যাখ্যা কর।

১৯. রচনার পরিপাট্যের পক্ষে বিশেষ হানিজনক কী? ব্যাখ্যা কর।

২০. প্রাবন্ধিক লেখার ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন কেন? ব্যাখ্যা কর।

৬. কোন ধরনের প্রবন্ধ লেখা পরিহার করা উচিত?/ লেখনী-ধারণ মহাপাপ- কখন এবং কেন?

সৃজনশীল প্রশ্নের দিকগুলো

১. সাহিত্য রচনায় বস্তুনিষ্ঠতার প্রয়োজন সম্পর্কে।

২. কাউকে খুশি করার জন্য বা বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য লেখার নেতিবাচক দিক।

৩. লেখার ক্ষেত্রে অনুকরণ করার মানসিকতা পরিহার প্রসঙ্গে।

৪. সাহিত্যে অলংকারের যথার্থ ব্যবহার প্রসঙ্গ।

৫. সাহিত্যের মান বা মর্যাদা নষ্ট হতে পারে এমন কারণ সম্পর্কে।

৬. লেখক বা সাহিত্যিককে নিজের বিদ্যা জাহির করা থেকে বিরত করা প্রসঙ্গে।

৭. উৎকৃষ্ট সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য বা গুণগুলো বর্ণনা প্রসঙ্গে।

৮. প্রমাণ হাতে রেখে প্রবন্ধ রচনার করার গুরুত্ব।

৯. সাহিত্য রচনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে।

১০. লেখক যে কারণে নীচ ব্যবসায়ীর সঙ্গে তুলনীয় হবেন সে সম্পর্কে।

মূলদিক: যথার্থ বা মানসম্মত সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে একজন লেখকে যেসব বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত তার বর্ণনা।

সৃজনশীল প্রশ্ন-১

উনিশ শতকের মধ্যভাগে পলাশপুরের জমিদার ছিলেন আফসার চৌধুরী। তার শোষণ, নির্যাতন ও অত্যাচারে হাজার হাজার প্রজা জীবন দিয়েছে। সাধারণ প্রজাদের কাছে তিনি ছিলেন একজন জীবন্ত মৃত্যুর প্রতীক। যার ওপর তার নজর পড়েছে তার সবকিছু তিনি কেড়ে নিয়ে তাকে হয় মেরে ফেলেছেন নতুবা গ্রামান্তর করেছেন। তার ঘনিষ্ঠ মোবারক মিয়াকে দিয়ে তিনি নিজের জীবন ও জমিদারি সম্পর্কে একটি বই লেখান। মোবারক মিয়াকে কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে ও জমি দিয়ে খুশি করিয়ে বইটি লিখিয়েছেন। মোবারক মিয়া তার বইয়ে আফসার চৌধুরীর অত্যাচার নির্যাতনের কথা কিছুই বলেননি বরং তার প্রজা হিতৈষী উদ্যোগের কথাই শুধু বর্ণনা করেছেন। আজ সেই বইটি লোকে দেখে কিন্তু অতীতের ইতিহাসের সঙ্গে তার কোনো মিল পায় না।

ক. বঙ্কিমচন্দ্র রচিত ইংরেজি উপন্যাসের নাম কী?

খ. সত্য ও ধর্মই সাহিত্যের উদ্দেশ্য- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

গ. উদ্দীপকের বর্ণনায় ‘বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন’ প্রবন্ধের যে দিক প্রকাশ পেয়েছে তা বর্ণনা কর।

ঘ. উদ্দীপকের মোবারক মিয়া অলোচ্য প্রবন্ধের লেখকের কাক্সিক্ষতজন হতে পেরেছে বলে তুমি মনে কর কি? যুক্তি দাও।

সৃজনশীল প্রশ্ন-২

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া জাবেদ বন্ধুদের কথায় প্ররোচিত হয়ে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে প্রবন্ধ রচনা করে প্রকাশ করে। কয়েকদিনের মধ্যেই তার এ লেখার বিরুদ্ধে সমাজের মানুষের প্রতিবাদ প্রবল হয়ে ওঠে। জাবেদ তার প্রবন্ধে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন তার সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রমাণ হাজির করতে না পারায় তাকে আইনের চোখে অপরাধী হতে হয়েছে। আসলে তার বন্ধুরা তাকে এমনভাবে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল যে, সে তথ্য যাচাই-বাছাই না করেই বন্ধুদের কথায় ভরসা রেখে প্রবন্ধ প্রকাশ করে এখন জেলে।

ক. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে কোন উপাধিতে ভূষিত করা হয়?

খ. কাহারও অনুকরণ করিও না- কেন বলা হয়েছে?

গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন’ প্রবন্ধের সাদৃশ্য তুলে ধর।

ঘ. উদ্দীপকে আলোচ্য প্রবন্ধের পূর্ণ প্রতিফলন হয়েছে বলে তুমি মনে কর কি? যুক্তি দাও।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button