আবশ্যিক বিষয়পড়ালেখাবাংলা ২য়সর্বশেষ

সংবাদ প্রতিবেদন ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন কিভাবে লিখবেন

ইংরেজি ‘Report writing’-এর পারিভাষিক রূপ ‘প্রতিবেদন লিখন’। আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা, বিষয় বা প্রসঙ্গ সম্পর্কে নির্মোহ, নিরপেক্ষভাবে তথ্যমূলক বিবৃতি লিখনকেই বলে প্রতিবেদন লিখন। বিষয় ও বৈচিত্র্য অনুসারে প্রতিবেদন বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। মূলত সাধারণ প্রতিবেদন বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন এবং সংবাদ প্রতিবেদন লেখার দরকার হয়।

ক. প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন

সাধারণত আমরা যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকি, সেই প্রতিষ্ঠানে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা, বিষয় বা প্রসঙ্গ সম্পর্কে যে প্রতিবেদন লিখতে হয়, সেটিই প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন বা সাধারণ প্রতিবেদন।

আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেসব অনুষ্ঠানাদি হয়ে থাকে, যেমন বার্ষিক বিজ্ঞানমেলা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, বিতর্ক উৎসব, নবীনবরণ, বর্ষবরণ, বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদ্​যাপন, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বিদায় অনুষ্ঠান, মিলাদ মাহফিল, বইমেলা ইত্যাদি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ অধ্যক্ষের কাছে লিখিত প্রতিবেদনই সাধারণ প্রতিবেদন বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন। 

১. সাধারণ প্রতিবেদন লেখার জন্য প্রথমে কর্তৃপক্ষের কাছে একটি সাধারণ আবেদনপত্র লিখতে হয়। 

২. আবেদনপত্রের ওপরের বাঁ দিকে তারিখ, এরপর কর্তৃপক্ষের পদবি-ঠিকানা, এরপর বিষয় ও সূত্র বা স্মারক নম্বর লিখতে হয়। (কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত চিঠির নম্বরই সূত্র বা স্মারক নম্বর)।

৩. আবেদনপত্রের শেষে নিচের বাঁ দিকে শিক্ষার্থীর নাম–ঠিকানা (প্রশ্নপত্রে উল্লেখিত নাম-ঠিকানা) লিখতে হয়। 

৪. পরে শিরোনামসহ মূল প্রতিবেদন লিখতে হয়।

৫. মূল প্রতিবেদনের প্রথম অনুচ্ছেদটি 5W + 1H সূত্র ব্যবহার করে লিখতে হয়। অর্থাৎ 

  • W= What (কী ঘটছে/ঘটেছে)
  • W= Where (কোথায় ঘটছে/ঘটেছে)
  • W= When (কখন ঘটছে/ঘটেছে)
  • W= Who (কারা এর সঙ্গে জড়িত/সংশ্লিষ্ট)
  • W= Why (কেন ঘটছে/ঘটেছে) 
  • H= How (কীভাবে ঘটছে/ঘটেছে)

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর একত্র করে শিক্ষার্থী প্রথম অনুচ্ছেদটি লিখবে। 

৬. প্রথম অনুচ্ছেদের পর একাধিক অনুচ্ছেদে ধারাবাহিকভাবে পুরো বিষয়টি বর্ণনা করতে হবে।

৭. মূল প্রতিবেদন লেখা শেষে বিনীত নিবেদক, ইতি, প্রতিবেদক এই কথাগুলো লেখা যাবে না।

৮. সাধারণ প্রতিবেদন বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখায় কোনো খাম দিতে হয় না। তবে প্রতিবেদন লেখা শেষে প্রতিবেদক ও প্রতিবেদন–সম্পর্কিত একটি তথ্য-ছক দেওয়া যেতে পারে।

খ. সংবাদ প্রতিবেদন

অন্যদিকে নাগরিক জীবনের বিভিন্ন সমস্যা, কোথাও ঘটে যাওয়া জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা, দুর্ঘটনা বা বিষয় প্রসঙ্গ সম্পর্কে তথ্যমূলক বিবৃতি তুলে ধরে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই সংবাদ প্রতিবেদনের লক্ষ্য। এ ক্ষেত্রে আমরা হয়ে যাই কোনো পত্রিকার সাংবাদিক অর্থাৎ নিজস্ব সংবাদদাতা বা স্টাফ রিপোর্টার বা নিজস্ব প্রতিবেদক বা কোনো জেলা বা থানা প্রতিনিধি। একজন রিপোর্টার হিসেবে সংবাদপত্রে প্রকাশ উপযোগী করে এ ধরনের প্রতিবেদন লিখতে হয়। 

১. সংবাদ প্রতিবেদন লিখতে সম্পাদক বা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনপত্র লিখতে হয় না।

২. শিরোনাম (হেডলাইন) দিয়ে প্রতিবেদন লেখা শুরু করতে হয়। হেডলাইন লেখার কতগুলো রীতি আছে। যেমন হেডলাইনের ফন্ট সাইজ সাধারণ লেখার ফন্ট সাইজ থেকে একটু বড় হয়, মূল প্রতিবেদনের ওপরে মাঝখান বরাবর লিখতে হয়। এ ক্ষেত্রে অন্য রঙের কালি ব্যবহার করলে ভালো।

৩. এরপর ডেটলাইন লিখতে হয়। প্রতিবেদকের নাম বা পদবি, প্রতিবেদন লেখার স্থান এবং প্রতিবেদন লেখার তারিখ—এই তিন তথ্যকে একত্রে ডেটলাইন বলে।

৪. ডেটলাইনের পর ইন্ট্রো বা প্রথম পরিচ্ছেদ লিখতে হয়। 5W + 1H সূত্র ব্যবহার করে দারুণভাবে প্রথম অনুচ্ছেদটি লেখা যায়।

৫. প্রথম অনুচ্ছেদের পর একাধিক অনুচ্ছেদে ধারাবাহিকভাবে বিষয়টি বর্ণনা করতে হবে।

৬. মূল প্রতিবেদন লেখা শেষে প্রতিবেদকের নাম, পদবি, বিনীত নিবেদক, ইতি— লেখা যাবে না।

৭. প্রতিবেদন লেখা শেষে খাম দিতে হবে না।

৮. সংবাদ প্রতিবেদন লিখনে প্রতিবেদককে অবশ্যই নির্মোহ ও নৈর্ব্যক্তিক হতে হবে। সংবাদ প্রতিবেদনে ভালো করতে হলে গাইড বই ছেড়ে দৈনিক কোনো পত্রিকার রিপোর্ট মনোযোগ দিয়ে পড়বে।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button
error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!