কোনও শিক্ষার্থী পাবলিক মূল্যায়নে এক বা দুটি বিষয়ে ফেল করলেও শর্তসাপেক্ষে একাদশ শ্রেণিতে (কলেজে) ভর্তি হতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে পরের দুই বছরের মধ্যে শুধু পাবলিক মূল্যায়নে অংশ নিয়ে ওই দুই বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। শিখনকালীন ও সামষ্টিক মূল্যায়ন উভয় ক্ষেত্রেই এই শর্ত প্রযোজ্য হবে। উত্তীর্ণ বা শর্তসাপেক্ষে উত্তীর্ণ কোনও শিক্ষার্থী মানোন্নয়নের জন্য এক বা একাধিক বা সব বিষয়ে আবার পাবলিক মূল্যায়নে অংশ নিতে পারবে।
অন্যদিকে শিক্ষার্থী ৭০ শতাংশ কর্মদিবসে বা ক্লাসে উপস্থিত না হলে পাবলিক মূল্যায়নের জন্য বিবেচিত হবে না। তবে, জরুরি বা বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় উপস্থিতির হার ৭০ শতাংশের কম হলেও প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সম্মিলিত আলোচনার মাধ্যমে কোনও শিক্ষার্থীকে পাবলিক মূল্যায়নে অংশ নেওয়ার জন্য বিবেচনা করতে পারবেন। তবে তার জন্য যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ ও এর পক্ষে যথাযথ প্রমাণ থাকতে হবে।
একজন নিবন্ধিত শিক্ষার্থী দশম শ্রেণির শিখনকালীন মূল্যায়নের শর্তপূরণ সাপেক্ষে পরের যেকোনও পাবলিক মূল্যায়নে (এসএসসি মূল্যায়ন) অংশ নিয়ে রিপোর্ট কার্ড বা পারদর্শিতার সনদ গ্রহণ করতে পারবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২-এর মূল্যায়ন কৌশল ও বাস্তবায়ন নির্দেশনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, এখন পর্যন্ত এটি চূড়ান্ত মূল্যায়ন নির্দেশনা। প্রয়োজনে সংশোধন-সংযোজন হতে পারে। দুই বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হলেও একাদশে ভর্তি হওয়া নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরবর্তীকালে ওই শিক্ষার্থীকে অবশ্যই দুই বছরের মধ্যে উত্তীর্ণ হতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কোনও শিক্ষার্থী কোনও সেমিস্টারের একটি বিষয়ে ফেল করলে বা পরীক্ষা না দিলেও পরবর্তী সেমিস্টারে ভর্তি হতে পারে। পরে তাকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে হয়- ঠিক তেমনই। তাছাড়া অনুত্তীর্ণ বিষয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য দুই বছর সময় পাওয়ায় ঝরে পড়ার হার কমে যাবে।’
বিষয়ভিত্তিক পারদর্শিতা
শিক্ষার্থী যদি দুইয়ের বেশি বিষয়ে পারদর্শিতার ক্ষেত্রে (Performance Strand) ‘বিকাশমান’ অথবা এর নিচের স্তরে থাকে তবে সেই বিষয়ে উত্তীর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে না। কোনও বিষয়ে একের বেশি পারদর্শিতার ক্ষেত্রে ‘প্রারম্ভিক’ স্তরে থাকলে শিক্ষার্থী ওই বিষয়ে উত্তীর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে না। কোনও শিক্ষার্থী তিন বা এর বেশি বিষয়ে অনুত্তীর্ণ থাকলে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে না।
শ্রেণি উত্তরণ: দশম শ্রেণি
শিক্ষার্থীর দশটি বিষয়ে সামগ্রিক পারদর্শিতা যাচাই করে দশম শ্রেণির পাবলিক মূল্যায়নে উত্তরণ নির্ধারিত হবে। পাবলিক মূল্যায়নে উত্তরণের বিষয়ে দুটি দিক বিবেচনা করা হবে। একটি হচ্ছে— শিক্ষার্থীর দশম শ্রেণিতে উপস্থিতির হার, অন্যটি বিষয়ভিত্তিক পারদর্শিতা।
শিক্ষার্থী ৭০ শতাংশ কর্মদিবসে উপস্থিত না হলে সে পাবলিক মূল্যায়নের জন্য বিবেচিত হবে না। তবে, জরুরি বা বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে উপস্থিতির হার ৭০ শতাংশের কম হলেও সব বিষয় শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সম্মিলিত আলোচনার মাধ্যমে কোনও শিক্ষার্থীকে পাবলিক মূল্যায়নে অংশ নেওয়ার জন্য বিবেচনা করতে পারেন। তবে তার জন্য যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ ও পক্ষে যথাযথ প্রমাণ থাকতে হবে।
কোনও শিক্ষার্থী এক বা দুটি বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হলে শর্তসাপেক্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবে। তবে এই ক্ষেত্রে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে শুধু পাবলিক মূল্যায়নে অংশ নিয়ে অনুত্তীর্ণ বিষয়গুলোতে উত্তীর্ণ হওয়ার শর্ত পূরণ করতে হবে। এ শর্ত শিখনকালীন ও সামষ্টিক মূল্যায়ন- উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। উত্তীর্ণ বা শর্ত সাপেক্ষে উত্তীর্ণ কোনও শিক্ষার্থী মান উন্নয়নের জন্য এক বা একের বেশি বা সব বিষয়ে আবার পাবলিক মূল্যায়নে অংশ নিতে পারবে।
একজন নিবন্ধিত শিক্ষার্থী দশম শ্রেণির শিখনকালীন মূল্যায়নের শর্তপূরণ সাপেক্ষে পরবর্তী যেকোনও পাবলিক মূল্যায়নে (এসএসসি মূল্যায়ন) অংশ নিয়ে রিপোর্ট কার্ড বা পারদর্শিতার সনদ নিতে পারবে।
মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পাওয়া ফলাফলের ব্যবহার
মূল্যায়ন কৌশল ও বাস্তবায়ন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মূল্যায়ন ব্যবস্থার সঠিক ও কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর যোগ্যতা অর্জন ও শিখন উন্নয়ন সম্পর্কিত যেসব তথ্য পাওয়া যাবে তার বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন, শিখন-শেখানো পদ্ধতির পরিমার্জন ও পরিবর্ধনসহ শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করা সম্ভব। এ কারণে শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় মূল্যায়ন পদ্ধতিতে প্রাপ্ত ফলাফলের উল্লেখিত বহুমুখী ব্যবহারের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মূল্যায়নে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, অগ্রগামী শিক্ষার্থীর জন্য বিশেষ সহযোগিতা (advanced support) এবং পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীর জন্য নিরাময়মূলক কার্যক্রম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
মূল্যায়নের ফলাফল থেকে শিক্ষার্থীর প্রবণতা চিহ্নিত করে তার ভবিষ্যৎ কর্মপরিক্রমা (future pathway) সম্পর্কে দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে। শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নের কাঠামো পরিবর্তন, পরিমার্জন ও উন্নয়নের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে মূল্যায়নের ফলাফল থেকে। মূল্যায়নের ফলাফল বিশ্লেষণ করে সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাসহ শিক্ষাক্রমের প্রভাব এবং সফলতার চিত্র পাওয়া যাবে। দেশীয় ও বৈশ্বিক চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ মানবসম্পদ গঠনে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে।