বাংলা প্রথম পত্র
দ্বাদশ শ্রেণি:
বিষয়: লালসালু (উপন্যাস)
শিখনফলঃ
- উপন্যাস কাকে বলে জানতে পারবো
- বাংলা উপন্যাসে ইতিহাসগত পরিচয়
- সামাজিক কুসংস্কার সম্পর্কে জানতে পারবো
- ধর্মব্যাবসায়ী তথা মাজার ব্যাবসায়ী মজিদের অস্তিত্ব সম্পকে জানতে পারবো
- ধর্মের চাদরে আবৃত করে ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে মজিদের প্রতিপত্তি সম্পর্কে জানা যাবে
- প্রতিবাদী নারী চরিত্র জমিলার পরিচয় পাওয়া যাবে।
- মানুষের অজ্ঞতার সুযোগে সুবিধাবাদী অর্থলিপ্সু সামাজিক উত্থান সম্পর্কে জানা যাবে।
- ধর্মব্যবসায়ী অন্ধত্বের কাছে স্কুল প্রতিষ্ঠা কিভাবে রুদ্ধ হয়ে পড়ে তা জানা যাবে।
- শস্যহীন জনবহুল অঞ্চলের মানুষ খেয়ে পরে বাঁচার জন্য গ্রাম শহরে পাড়ি জামায় কিভাবে তা জানা যাবে।
- গ্রামীণ নারীদের স্বামীভক্তি ও অত্যাচারিত হওয়া বিষয়ে জানা যাবে। যখন তখন তালাক দেয়া বিষয়ে।
লেখক পরিচিতিঃ
- নামঃ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ (১৯২২-১৯৭১)
- জন্মঃ ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ। তাঁদের পৈতৃক নিবাস ছিল নোয়াখালী। কলকাতা ও ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে তাঁর শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়। সাংবাদিকতা দি যে তাঁর কর্মজীবন শুরু। দেশে-বিদেশে সরকারের বিভিন্ন উচ্চতর পদে তিনি অধিষ্টিত ছিলেন।
- বাংলা সাহিত্যের বিরলপ্রজ ও সপ্রতিভ রুচিঋদ্ধ সাহিত্য – শিল্পের নন্দিত এক নাম সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার, জীবনসন্ধানী ও সমাজ সচেতন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর রচনায় উজ্জ্বলরূপে প্রতিফলিত হয়েছে ধর্মীয় সামাজিক কুসংস্কার, মূল্যবোধের অবক্ষয়, মানবমনের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রভৃতি। বাংলাদেশের কথাশিল্পকে তিনি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করেছেন।
- সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন।
- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ এর ১০ অক্টোবর প্যারিসে মৃত্যু বরণ করেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ।
লেখকের সৃষ্টিসমূহঃ
- উপন্যাসঃ লালসালু (১৯৪৮), চাঁদের অমাবস্যা (১৯৬৪), কাঁদো নদী কাঁদো (১৯৬৮), কদর্য এশীয় (২০০৬)।
- ছোট গল্পঃ নয়ন চারা (১৯৪৫), দুই তীর ও অন্যান্য গল্প (১৯৬৫)।
- অগ্রন্থিত গল্পাবলিঃসীমাহীন একনিমেষ, চিরন্তন পৃথিবী, চৈত্র দিনের এক দ্বিপ্রহরে, ঝড়ো সন্ধ্যা, প্রান্থনিক, পথ বেধে দিল, মানুষ, অনুবৃত্তি, সাত বোন পারুল, সাত বোন পারুল (দ্বিতীয় দফা), ছায়া, দ্বীপ, প্রবল হাওয়া ও ঝাওগাছ, হোমেরা, স্থাবর, স্বপ্ন নেবে এসেছিল, ও আর তারা, সবুজ মাঠ, স্বগত, মানসিকতা, কালচার, সূর্যালোক, মাঝি, অবসর কাব্য, নকল, রক্ত ও আকাশ, মৃত্যু, স্বপ্নের অধ্যায়, সতীন, বংশের জের, নানির বাড়ির কেল্লা, না কান্দে বাবু ।
- নাটকঃ বহিপীর (১৯৬০), তরঙ্গভঙ্গ, আষাঢ় ১৩৭১( জুন, ১৯৬৫), সুড়ঙ্গ এপ্রিল (১৯৬৪), উজানে মৃত্যু,
বিশেষ_দ্রষ্টব্যঃ
পাঠ পরিচিতিঃ
- “লালসালু” উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ Tree without Roots
- মূল চরিত্র মজিদ।শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাকে ঘিরেই উপন্যাসের কাহিনি আবর্তিত। মহব্বতনগর গ্রামের অধিবাসীদের মাজারকেন্দ্রিক ভয় ভক্তি শ্রদ্ধা ও আকাঙ্ক্ষা সব নিয়ন্ত্রণ করে মজিদ। তার চক্রান্তেই নিরুদ্দেশ হয় তাহের ও কাদেরের বাপ।
- আওয়ালপুরের পীরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার শেষে সে পীরকেও সে করে পরাভূত।
- খালেক ব্যাপারীর প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেওয়ানো
- যুবক আক্কাস এর স্কুল প্রতিষ্ঠার আয়োজনকে বিদ্রূপ ও তাকে অধার্মিক হিসেবে চিহ্নিত করে তাকে গ্রাম ছাড়া করা
- এ সবের মধ্য দিয়ে মজিদের প্রভাব ও প্রতিষ্ঠা নিরঙ্কুশভাবে নিজের করে নেয়।
- সে দ্বিতীয় বিয়ের পিড়িতেও বসে । জমিলা সে নতুন বউয়ের নাম, চঞ্চল সহজ সরল মেয়ে, কিন্তু মজিদ তাকে বসে আনতে পারে না, একটু প্রতিবাদী সে। মজিদের মুখে সে থুথু ছিটায় ফলে ক্ষিপ্ত মজিদ জমিলাকে মাজার ঘরের অন্ধকারে বেঁধে রাখে। শুরু হয় প্রবল ঝড়-বৃষ্টি কিন্তু মজিদের প্রথম স্ত্রী রহীমার হৃদয় ব্যাকুল হয়। মজিদের প্রতি রহিমার যে বিশ্বাস ছিল পর্বতের মতো অটল এবং ধ্রুবতারার মতো অনড় সে রহীমাই করে বিদ্রোহ। বোঝা যায় মজিদের প্রতিষ্ঠার ভিতে ফাটল ধরেছে।
- প্রতীকের মাধ্যমে জমিলার পা মাজারকে যে আঘাত করে, তা সমাজের এ কুসংস্কারের কপালে কলঙ্কলেপনেরই শামিল।
- শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলে গ্রামবাসী মজিদের কাছে প্রতিকার চায় কিন্তু মজিদের কাছ থেকে ধমক ছাড়া কিছুই পায় না, মজিদ বলে : নাফরমানি করিও না ; খোদার ওপর তোয়াক্কেল রাখো। এভাবেই বিপর্যস্ত পারিবারিক জীবন, বিধ্বস্ত ফসলের ক্ষেত এবং দরিদ্র গ্রামবাসীর হাহাকারের মধ্য দিয়ে লালসালু উপন্যাসের কাহিনি শেষ হয়।
- মজিদ মূলত: কুসংস্কার, প্রতারণা এবং অন্ধবিশ্বাসের প্রতীক। প্রথাকে সে টিকিয়ে রাখতে চায়, প্রভূ হতে চায়, চায় অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী হতে। প্রতারণা যা করে তা সে সজ্ঞানে করে। সে ঈশ্বর বিশ্বাসীও । তবে মাজারটিকে সে টিকিয়ে রাখতে চায় যে কোন মূল্যে।
- মজিদ নিজের অস্তিত্বকে যে কোন মূল্যে টিকিয়ে রাখতে চায় ধর্মকে পূঁজি করে সে নামে এক ব্যবসায়। তাই সে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বুকে ঝুলানো তামার খিলাল দিয়ে দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে সে স্পষ্টে বোঝে দুনিয়ায় স্বচ্ছলভাবে দুবেলা খেয়ে বাঁচার জন্য যে খেলা খেলতে যাচ্ছে সে সাংঘাতিক।
- উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। দ্বিতীয় প্রকাশকাল ১৯৬০।
মূল বিষয়ঃ
- পটভূমিঃ ১৯৪০ কিংবা ১৯৫০ দশকের বাংলাদেশের গ্রামসমাজ, মূলত গ্রামীণ সমাজের সাধারণ সরলতাকে কেন্দ্র করে ধর্মকে ব্যবসার উপাদান রূপে ব্যবহারের একটি নগ্ন চিত্র উপন্যাসটির
- ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় লালসালু অনুবাদ করা হয়।
বাসায় নিজে নিজে অনুশীলন করোঃ
মূল্যমানের পর্যায়ে হানা চলে অবমূল্যের নগ্ন থাবা সবখানে মূল্যবোধের ভাঙ্গনের শব্দ শুনছি অহরহ। পার করেছি সময় সেই বোধের ভাঙ্গনে চারিদিক শুধু ধেয়ে চলা বিরামহীন এক পাঠ।
ক) লালসালু উপন্যাসটির ইংরেজি অনুবাদ কে করেন?
খ) “শষ্যের চেয়ে টুপি বেশি ধর্মের আগাছা বেশি” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ) উদ্দীপকে “লালসালু” উপন্যাসের কোন বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে ব্যাখ্যা করো।
ঘ) উদ্দীপকে বর্ণিত “ভাঙ্গনের শব্দ শুনছি অহরহ” বিশ্লেষণ করো।
উপন্যাস বার বার পড়তে হয়। এর সাথে লালসালু উপন্যাসের কোন বিষয়কে চিহ্নিত করে।
মুহাম্মদ রুহুল কাদের, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজ, চট্টগ্রাম ইপিজেড। মোবাইল# ০১৭১২ ৬১৮১৬৯।