বেসরকারী পাবলিক স্কুল ও কলেজ

এইচএসসি ২০২৪ পরীক্ষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি অংশে যেভাবে ভালো নম্বর তুলবে

প্রিয় পরীক্ষার্থী, বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা পুনর্বিন্যস্ত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অনুষ্ঠিত হবে। ব্যাকরণ অংশে ৩০ ও নির্মিতি অংশে ৭০ নম্বর, মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে। বাংলা দ্বিতীয় পত্রে বেশি নম্বর পাওয়া নির্ভর করে ব্যাকরণ ও নির্মিতি অংশে ভালো করার ওপর। কারণ, এ অংশে যে বিষয়গুলো থাকে, সেগুলোর গঠনকাঠামো ও বিষয়বস্তু উপস্থাপনের রীতিনীতি নিয়ে অনেক শিক্ষার্থীই বিভ্রান্ত থাকে। তাই বিষয়গুলো যথাযথভাবে লেখার সঠিক কৌশল জানা দরকার।

ব্যাকরণ অংশঃ ( নম্বর ৩০, ৬টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।)

প্রশ্ন ১: বাংলা উচ্চারণের নিয়ম, নম্বর ৫ 

বাংলা উচ্চারণের নিয়ম অংশে দুটি প্রশ্ন থাকবে, যেকোনো একটি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। 

একটি প্রশ্নে ‘অ’-ধ্বনি, ‘এ’-ধ্বনি, ‘ব’-ফলা, ‘ম’-ফলা বা ‘য’-ফলার উচ্চারণের যেকোনো পাঁচটি নিয়ম লিখতে বলবে। আরেকটি প্রশ্নে আটটি শব্দ দেওয়া থাকবে, সেখান থেকে যেকোনো পাঁচটি শব্দের শুদ্ধ উচ্চারণ লিখতে হবে।

এ ক্ষেত্রে শব্দের উচ্চারণ নিশ্চিতভাবে লিখতে পারলে সেটার উত্তর করাই ভালো, তা না হলে উদাহরণসহ উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম লেখা যেতে পারে।

প্রশ্ন ২: বাংলা বানানের নিয়ম, নম্বর ৫

বাংলা বানানের নিয়ম অংশে দুটি প্রশ্ন থাকবে, যেকোনো একটি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। 

একটি প্রশ্নে বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের (তৎসম শব্দ/অর্ধতৎসম শব্দ) পাঁচটি নিয়ম লিখতে বলবে। আরেকটি প্রশ্নে ভুল বানানের আটটি শব্দ দেওয়া থাকবে, সেখান থেকে যেকোনো পাঁচটি শব্দের শুদ্ধ বানান লিখতে হবে। 

এ ক্ষেত্রে শব্দের শুদ্ধ বানান লেখাই বেশি  যুক্তিসংগত।

প্রশ্ন ৩:  ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি, নম্বর ৫

বাংলা ভাষার ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি অংশে ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণির শ্রেণিবিভাগ, বিশেষ্য, বিশেষণ, ক্রিয়াপদ ও আবেগ শব্দের শ্রেণিবিভাগ–সম্পর্কিত একটি বর্ণনামূলক প্রশ্ন থাকবে। এর বিকল্প হিসেবে থাকবে প্রদত্ত অনুচ্ছেদ থেকে উক্ত ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি নির্দেশকরণ। 

এ ক্ষেত্রে বাক্য বা অনুচ্ছেদ থেকে ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি নির্ণয় করাই উত্তম।

প্রশ্ন ৪: বাংলা শব্দ গঠন, নম্বর ৫

বাংলা শব্দ গঠন অংশে উপসর্গ থেকে উপসর্গের সংজ্ঞা, শ্রেণিবিভাগ ও প্রয়োজনীয়তা–বিষয়ক একটি বর্ণনামূলক প্রশ্ন থাকবে এবং বিকল্প হিসেবে থাকবে ব্যাসবাক্যসহ সমাস নির্ণয়। শুধু এই প্রশ্নের ক্ষেত্রেই নয়, বরং ব্যাকরণ অংশের সব প্রশ্নের ক্ষেত্রেই সময় ও বেশি নম্বর পাওয়ার দিক বিবেচনায় বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর করার চেয়ে নির্ণয়মূলক প্রশ্নের উত্তর করাই সবচেয়ে ভালো। 

প্রশ্ন ৫: বাক্যতত্ত্ব অংশ, নম্বর ৫ 

বাক্যতত্ত্ব অংশে বাক্য, সার্থক বাক্যের বৈশিষ্ট্যগুলো ও বাক্যের শ্রেণিবিভাগ থেকে বর্ণনামূলক একটি প্রশ্ন থাকবে এবং এর বিকল্প হিসেবে থাকবে বাক্যান্তরকরণ। অর্থাৎ নির্দেশনা অনুযায়ী এক ধরনের বাক্যকে অন্য ধরনের বাক্যে রূপান্তর করতে হবে। 

এ ক্ষেত্রে বাক্যান্তর যথাযথভাবে করতে পারলে পূর্ণ নম্বর পাওয়া যায়।

প্রশ্ন ৬: বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ, নম্বর ৫ 

বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ অংশে কোনো একটি অনুচ্ছেদে শব্দ ও বাক্যের অশুদ্ধ ও অপপ্রয়োগ দূর করে শুদ্ধ প্রয়োগ করতে হবে। এর বিকল্প হিসেবে আটটি ভুল বাক্য দেওয়া থাকবে, সেখান থেকে যেকোনো পাঁচটি অশুদ্ধ বাক্যকে শুদ্ধ করতে হবে। বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগের বিভিন্ন উদাহরণ আগে থেকেই অনুশীলন করলে এ অংশে পূর্ণ নম্বর পাওয়া যায়।

নির্মিতি অংশঃ ( নম্বর ৭০, ৬টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।)

১. বঙ্গানুবাদ/পারিভাষিক শব্দ, নম্বর ১০ 

নির্মিতি অংশের শুরুতেই ১০ নম্বরের জন্য ১টি ইংরেজি অনুচ্ছেদের বঙ্গানুবাদ করতে বলবে অথবা ১০টি ইংরেজি শব্দের পারিভাষিক রূপ লিখতে বলবে। বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষার ওপর যদি তোমার যথেষ্ট দখল না থাকে, তাহলে বঙ্গানুবাদ উত্তর দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ, অসাধারণ ভাষিক দক্ষতা ছাড়া সার্থক ভাবানুবাদ করা সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে পারিভাষিক শব্দের উত্তর করাই ভালো। নির্ভুল বানানে প্রদত্ত শব্দগুলোর বাংলা পরিভাষা লিখতে পারলে পূর্ণ নম্বরই পাবে। 

২. দিনলিপি/প্রতিবেদন, নম্বর ১০

‘দিনলিপি’ লিখন থেকে ১টি ও ‘প্রতিবেদন’ লিখন থেকে ১টি করে মোট ২টি প্রশ্ন থাকবে, নম্বর–১০। যেকোনো ১টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। ‘দিনলিপি’ লিখন আইটেমটি তোমাদের জন্য একেবারেই নতুন। এ জন্য অনেকেরই এর ধরন-গড়ন বা রীতিনীতি সম্পর্কে সম্যক ধারণার অভাব রয়েছে। এ ক্ষেত্রে মনে রেখো, একটি বিশেষ দিন তুমি কীভাবে পার করলে অর্থাৎ ওই দিনে তুমি কী কী করলে, তার ধারাবাহিক বর্ণনা জানতে চাওয়া ‘দিনলিপি’ লিখনের মূল উদ্দেশ্য নয়; বরং উদ্দেশ্য হলো ওই একটি দিনকে কেন্দ্র করে তোমার চিন্তাচেতনা, স্বপ্ন-কল্পনা, পরিবেশ-প্রতিবেশ, সময়-সমাজ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, ধর্ম-বিজ্ঞান-দর্শন-মনস্তত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়কে তুমি কীভাবে তোমার লেখায় তুলে আনতে পারলে, ওই দিনের ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে এগুলোকে কীভাবে সম্পৃক্ত করতে পারলে। যদি মনে করো সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগপর্যন্ত তুমি যা যা করলে তা-ই দিনলিপি, তাহলে তোমার দিনলিপি লেখার দরকার নেই।

দিনলিপির বিকল্প হিসেবে থাকবে প্রতিবেদন লিখন। ইংরেজি ‘Report writing’-এর পারিভাষিক রূপ ‘প্রতিবেদন লিখন’। আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা, বিষয় বা প্রসঙ্গ সম্পর্কে নির্মোহ, নিরপেক্ষভাবে তথ্যমূলক বিবৃতি লিখনকেই বলে প্রতিবেদন লিখন। বিষয় ও বৈচিত্র্য অনুসারে প্রতিবেদন বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। মূলত সাধারণ প্রতিবেদন বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন এবং সংবাদ প্রতিবেদন লিখতে বলা হয়। প্রতিবেদন কিভাবে লিখবে, একটি ভালো প্রতিবেদনে কি কি থাকতে হবে উদাহরণ সহ বিস্তারিত জানতে এই লিংকে ক্লিক করো।

৩. বৈদ্যুতিন চিঠি/আবেদনপত্র, নম্বর ১০ 

৪. সারাংশ বা সারমর্ম/ভাবসম্প্রসারণ, নম্বর ১০

সারাংশ/সারমর্ম থেকে ১টি ও ভাবসম্প্রসারণ থেকে ১টি করে মোট দুটি প্রশ্ন থাকবে, যেকোনো ১টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, নম্বর–১০। 

আমরা জানি, গদ্য রচনার অন্তর্নিহিত বক্তব্যকে সংক্ষেপে লেখার নাম সারাংশ এবং কাব্য ভাষায় লেখা কোনো রচনার মূলভাবকে সংক্ষেপে লেখার নাম সারমর্ম। সারাংশ ও সারমর্ম লেখায় বিশেষ দক্ষতা থাকলে এখান থেকে উত্তর করাই উত্তম।

কারণ, খুব অল্প সময়ে ১০ নম্বরের একটি প্রশ্নের উত্তর করা যায় এবং বাকি সময়টা অন্য প্রশ্নের উত্তর লেখায়, বিশেষ করে প্রবন্ধ লেখার সময় ব্যবহার করা যায়। তবে সারাংশ ও সারমর্ম লেখায় পারঙ্গমতা না থাকলে হুট করে এর উত্তর করতে যাওয়া ঠিক হবে না। কারণ, সারাংশ ও সারমর্ম লেখার বেশ কিছু রীতি-পদ্ধতি আছে। যেমন— 

সারাংশ ও সারমর্মের বিকল্প হিসেবে থাকবে ভাবসম্প্রসারণ। চিন্তাশীল কবি ও সাহিত্যিকদের কোনো কোনো বক্তব্যের মধ্যে গভীর কোনো ভাব, দর্শন বা তত্ত্ব নিহিত থাকে। ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ ভাবসত্যকে সহজবোধ্য করে তোলার নামই ভাবসম্প্রসারণ।

ভাবসম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রেও কতগুলো রীতিনীতি মেনে চলতে হয়। যেমন—

৫. সংলাপ/খুদে গল্প, নম্বর ১০ 

‘সংলাপ’ থেকে ১টি এবং ‘খুদে গল্প’ রচনা থেকে ১টি করে মোট দুটি প্রশ্ন থাকবে, যেকোনো ১টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে, নম্বর–১০। 

পাঁচটি বিষয় থেকে যেকোনো ১টি বিষয়ে প্রবন্ধ লিখতে হবে।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, জাতীয় চেতনা, শিল্প ও অর্থনীতি এবং সাম্প্রতিক বিষয়—এগুলোর ওপর ভিত্তি করে পাঁচটি প্রবন্ধ থাকবে। রচনা ও প্রবন্ধের মধ্যে কিন্তু অনেক পার্থক্য। ওপরের শ্রেণিগুলোয় তুমি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর রচনা লিখেছ, এখন লিখতে হবে প্রবন্ধ।

অর্থাৎ তত্ত্ব, তথ্য, শব্দ চয়ন, বাক্য গঠন, ভাষাশৈলী, উপস্থাপনা, বিষয়বস্তুর গভীরতা, প্রাসঙ্গিকতা—এসব উঁচুমার্গের হতে হবে। সস্তাদরের কথাবার্তা, অপ্রাসঙ্গিক তথ্য, পৃষ্ঠা ভরার প্রবণতা ইত্যাদি প্রবন্ধের ক্ষেত্রে কাম্য নয়। বিষয় ও বৈচিত্র্য অনুসারে প্রবন্ধের বিভিন্ন অংশের শিরোনাম, উপশিরোনাম দেওয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, একটি প্রবন্ধের নম্বর ২০, কাজেই মানসম্পন্নভাবে একটি প্রবন্ধ লেখার চেষ্টা করবে।

মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, প্রভাষক, মাস্টার ট্রেইনার, সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঢাকা

Exit mobile version